ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে হামের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ ।। রোহিঙ্গা শরণার্থীই দায়ী, প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি

rohআহমদ গিয়াস, কক্সবাজার ।।    কক্সবাজারে হামের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে দশ লাখে ৪ জনের এ রোগ ধরা পড়ত, এখন ধরা পড়ছে ৪৫৩ জনের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর শতগুণ বেশি এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।এর পেছনে সম্প্রতিআসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কক্সবাজার জেলাব্যাপী বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল শনিবার থেকে শুরু হওয়া উক্ত কর্মসূচি আঠার দিনব্যাপী চলবে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, হঠাৎ করে জেলাব্যাপী বিশেষ করে উখিয়াটেকনাফে হামের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পায়। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করে দ্রুত বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গতকাল শনিবার থেকে কক্সবাজার জেলার ১১২টি স্থায়ী কেন্দ্রে এবং আরো ১৮২৩টি অস্থায়ী কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে জানান সহকারী সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।

তিনি জানানটিকাদান কর্মসূচি আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে এবং এতে ৫ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের হামরুবেলা রোগের টিকা খাওয়ানো হবে। যারা ইতিপূর্বে টিকা নিয়েছে তারাও এ টিকা নিতে পারবে। তবে অসুস্থ ও আগে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছে এমন শিশুদের এ টিকা দেয়া হবে না। এ কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৮ জন শিশুর মাঝে টিকা খাওয়ানোর লক্ষ্য রয়েছে বলে তিনি জানান। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. পু চ নু জানানগত বছরের অক্টোবরের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক ভাবে নতুন রোহিঙ্গা আসার কারণে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ রোহিঙ্গা শিশুরা ‘অরক্ষিত’, তাদেরকে কোন রোগ প্রতিরোধক টিকা দেয়া হয় না।

প্রসঙ্গত: গত বছর মিয়ানমারে সেনা অভিযানে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত এবং সহস্রাধিক মানুষ আহত ও শতাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এ সময় দলে দলে বাংলাদেশে চলে আসে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছে। যার অধিকাংশই শিশু। কক্সবাজারের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এমএন আলম জানানহাম ও রুবেলা ভাইরাসজনিত ছোঁয়াছে রোগ। এটাকে তিন দিনের হামও বলা হয়। যেকোন বয়সের মানুষ রুবেলা আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এটি সংক্রমিত হয় বেশি। এ রোগে আক্রান্ত শিশু প্রতিবন্ধীতে পরিণত হতে পারে। তিনি জানানএ রোগে সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা ও সামান্য জ্বর (১০১ ডিগ্রি পর্যন্ত) হয় এবং কানের পেছনে ও ঘাড়ে লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যায়। এছাড়া জয়েন্টে ব্যথা এবং চামড়ায় হাল্কা লাল বা গোলাপী রঙের রেশ (রট্রদ) হতে পারে। তিন দিন পর সাধারণত: জ্বর সেরে যায়, চামড়ায় রেশ থাকলে তাও আস্তে আস্তে চলে যায়। তবে আক্রান্তদের মধ্যে গর্ভবর্তী মহিলাদের একপঞ্চমাংশের ডেলিভারিতে মৃত সন্তান প্রসব হতে দেখা যায়। বাকিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রে জন্মগত ত্রুটি, বধিরতা, ছানিযুক্ত চোখ ও অন্ধত্বসহ বিভিন্ন জন্মগত সমস্যা হতে পারে। তাদের অনেকে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়, দৈহিক বৃদ্ধিও কম হয়।

পাঠকের মতামত: